মধুসূদন তারাপ্রসন্ন বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ ১৯০৪ সালে প্রতিষ্ঠিত ব্যতিক্রমধর্মী একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। যশোর জেলার সদর থানার অন্তর্গত বেজপাড়াস্থ বি. কে রোডে এর অবস্থান। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলা মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও এর ব্যতিক্রম নয়। নিরবচ্ছিন্ন ভাবে শিক্ষার্থীর প্রকৃত মেধা ও মননশীলতার সুষ্ঠ বিকাশ ঘটানোর অভিলক্ষ্যে আধুনিক প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহারে মধুসূদন তারাপ্রসন্ন বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ সচেষ্ট রয়েছে।
যশোর জেলার অবহেলিত নারী সমাজের মাঝে শিক্ষার জ্ঞান প্রসারের লক্ষ্যে তৎকালীন শিক্ষানুরাগী, জমিদার ও শিক্ষাবিদ রায় বাহাদুর যদুনাথ মজুমদার তার ১ একর ৮২ শতক জমিতে অত্র এলাকার বিদ্যোৎসাহী ব্যক্তিবর্গের সহযোগিতায় ১৯০৪ সালে বেজপাড়াতে একটি প্রাথমিক বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। তার বাবার নামানুসারে বিদ্যালয়টির নামকরণ করেন “তারাপ্রসন্ন প্রাথমিক বালিকা বিদ্যালয়”। রায় বাহাদুর যদুনাথ মজুমদার শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিকাশে এতটাই উদার ছিলেন যে, পরবর্তীতে তার স্থাবর সম্পত্তির অধিকাংশই শিক্ষার উন্নয়নে দান করেন। তারই জমিতে বর্তমানে শহরের লোন অফিস পাড়ায় “সম্মিলনী ইন্সটিটিউশন” ও “আদর্শ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়” প্রতিষ্ঠিত হয়ে শিক্ষাদানে নিয়োজিত রয়েছে। যশোর ইন্সটিটিউটেও রয়েছে তার ব্যাপক অবদান। যার জন্য ইন্সটিটিউট অঙ্গনে তার আবক্ষ মূর্তি স্থাপন করে সযত্নে রক্ষণাবেক্ষণ করা হচ্ছে। তৎকালীন বৃটিশ শাসক গোষ্ঠী হতে তার প্রাপ্ত উপাধি হল- এম. এ, বি, এল, সি, আই, ই, কাইজার-ই-হিন্দ, বেদান্ত বাচস্পতি, বিদ্যা বারিধী।
পরে বেজপাড়া এলাকার অপরাপর বিদ্যোৎসাহী ব্যক্তিবর্গ একই স্থানে একটি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন এবং মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের নামানুসারে বিদ্যালয়টির নামকরণ করেন মধুসূদন দত্ত উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়। এর আরো কিছু পরে এলাকার কিছু সুধীমহল বিদ্যালয় দুটিকে একীভূত করেন এবং যৌথভাবে প্রতিষ্ঠানটির নামকরণ করেন ‘মধুসূদন তারাপ্রসন্ন বালিকা বিদ্যালয়” সংক্ষেপে ‘এম এস টি পি গার্লস স্কুল’। স্কুলের সামগ্রিক কর্মকান্ডে সন্তুষ্ট হয়ে কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ১৯২৬ সালে প্রতিষ্ঠানটিকে অনুমোদন দেয় এবং মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করে। পরবর্তীতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী পর্যায়ে প্রতিষ্ঠানটি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয় এবং এর অফিসিয়াল নথিপত্র হারিয়ে যায়। এ কারণে প্রতিষ্ঠাকালীন প্রধান শিক্ষক, শিক্ষকবৃন্দসহ পরিচালনা পরিষদের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
তবে প্রাপ্ত তথ্য মতে, ১৯৬৪ সাল থেকে প্রতিষ্ঠান প্রধানের দায়িত্বে যারা নিয়োজিত ছিলেন তারা হলেনঃ সর্বজনাব মোঃ আজিজুর রহমান (১৯৯৪-৬৫), আর বি নূরজাহান (১৯৬৬-৬৮), মিসেস শরীফা ইসলাম (১৯৬৮-৬৮), সিরাজুল ইসলাম (১৯৬৯-৬৯), আহম্মদ আলী (১৯৬৯-৭০), মিসেস রোকেয়া খাতুন (১৯৭০-৭৪), মিসেস শরীফা ইসলাম (১৯৭৪-৮৮), মিসেস রোকেয়া খাতুন (১৯৮৯-৯০), আবুল কাসেম সিদ্দীকি (১৯৯০-৯০), মিসেস ফরিদা খাতুন (১৯৯০-২০০৯), মোঃ খায়রুল আনাম (২০১০-বর্তমান)।